জীবনী

অনির্বাণ: আধ্যাত্মিক সাধক ও লেখক (১৮৯৬-১৯৭৮)

0

অনির্বাণ, মূল নাম নরেন্দ্রনাথ ধর, ছিলেন এক বিশিষ্ট ধর্মসাধক ও লেখক। ১৮৯৬ সালের ৮ জুলাই ময়মনসিংহে জন্মগ্রহণ করেন। উপনয়ন-সংস্কারের পর তাঁর নাম হয় বরদা ব্রহ্মচারী এবং পরবর্তীতে সন্ন্যাস গ্রহণের পর স্বামী নির্বাণানন্দ সরস্বতী। তিনি হিমালয়ের গভীর অরণ্যে আশ্রয় নিয়ে অনির্বাণ নাম ধারণ করে তপস্যা করেন। তাঁর পিতা রাজচন্দ্র ধর সপরিবারে তান্ত্রিক যোগী নিগমানন্দ পরমহংসের শিষ্যত্ব গ্রহণ করে হিমালয়ের কোকিলামুখ আশ্রমে অবস্থান করেন।

শৈশব ও শিক্ষা

নরেন্দ্রনাথ বাল্যকাল থেকেই অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। ময়মনসিংহ সিটি স্কুল থেকে এন্ট্রান্স এবং ঢাকা থেকে আই.এ ও বি.এ পরীক্ষায় অসাধারণ কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন। পরে কলকাতার সংস্কৃত কলেজ থেকে বেদ ও মীমাংসা শাস্ত্রে এম.এ পাস করেন। সংস্কৃত সাহিত্য, ধর্মশাস্ত্র এবং বেদ ছাড়াও তিনি বিভিন্ন বিষয়ে অধ্যয়ন করেন। বারাণসী ও সারনাথে থাকাকালে বৌদ্ধধর্মে বিশেষ জ্ঞানার্জন করেন। তিনি ফরাসি ভাষাসহ আরও দু-একটি বিদেশি ভাষায় পারদর্শী ছিলেন।

কর্মজীবন ও লেখনী

১৯১৮-৩০ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ বারো বছর অনির্বাণ স্বামী নিগমানন্দ পরমহংসের কোকিলামুখ আসাম-বঙ্গীয় সারস্বত মঠের পরিচালক, ঋষি-বিদ্যালয়ের আচার্য এবং আর্য্যদর্পণ মাসিক পত্রিকার সম্পাদক পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। সনাতন ধর্ম ও অধ্যাত্মশিক্ষা প্রসারের উদ্দেশ্যে তিনি বিভিন্ন গ্রন্থ রচনা করেন। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থসমূহের মধ্যে রয়েছে শিক্ষা, প্রবচন, গীতানুবচন, বেদান্তজিজ্ঞাসা, বেদমীমাংসা, উপনিষৎ প্রসঙ্গ। অরবিন্দ ঘোষের The Life Divine গ্রন্থের বঙ্গানুবাদ করেন এবং বেদমীমাংসা গ্রন্থের জন্য রবীন্দ্র পুরস্কারে ভূষিত হন।

জ্ঞানার্জনের আগ্রহ

সন্ন্যাসী হলেও অনির্বাণের বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞানলাভের অদম্য আগ্রহ ছিল। তিনি মার্ক্সীয় দর্শন, আণবিক বিজ্ঞানের অগ্রগতি, এমনকি বাগান করার উপরেও পড়াশোনা করেছেন। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় এ সংক্রান্ত তাঁর বহু প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। বেদব্যাখ্যার সঙ্গে সম্পর্কিত তাঁর দুটি উল্লেখযোগ্য রহস্যময় কাব্যগ্রন্থ হচ্ছে কাবেরী ও কাজরী।

আলমোড়ার হৈমবতী আশ্রম

অনির্বাণ আলমোড়ায় নিজ প্রতিষ্ঠিত হৈমবতী আশ্রমে থাকাকালে বিখ্যাত ফরাসি সাংবাদিক ভগিনী নিবেদিতার জীবনীকার মাদাম লিজেল রেঁমো তাঁর ধর্মালোচনা শুনে তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। রেঁমোর রচিত গ্রন্থ To Live Within-এ অনির্বাণের আধ্যাত্মিক জীবনের বেশকিছু পরিচয় পাওয়া যায়।

মানবধর্ম ও বাউল পরিচয়

অনির্বাণ বিশ্বাস করতেন, মানুষ এক বিশ্বজনীন ধর্মের দিকে এগিয়ে চলেছে, যা হবে সহজ মানবধর্ম। তিনি নিজেকে সহজ বাউল বলে পরিচয় দিতেন এবং মানবতাবাদের আদর্শ প্রচার করতেন।

মৃত্যু ও স্মৃতি

১৯৭৮ সালের ৩১ মে অনির্বাণ মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর জীবনের বিভিন্ন পর্যায় এবং কর্ম আমাদের কাছে এক অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।

এইভাবে, অনির্বাণ তাঁর আধ্যাত্মিক সাধনা, জ্ঞানার্জন ও লেখনী দ্বারা আমাদের সমাজে এক বিশেষ স্থান অধিকার করে আছেন। তাঁর জীবন ও কর্ম আমাদের জীবনে একটি মূল্যবান দিশা প্রদান করে।

অপুষ্টি: বাংলাদেশের এক বিশাল সমস্যা
ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের বিবর্তন: প্রবণতা এবং উদ্ভাবন

Reactions

0
0
0
0
0
0
ইতিমধ্যে এই পোস্টের জন্য প্রতিক্রিয়া করা হয়েছে।

Nobody liked ?

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

GIF