পুরাণ রচনা

গিলগামেশের মহাকাব্য: একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ

0

গিলগামেশের মহাকাব্য প্রাচীন মেসোপটেমিয়া থেকে উদ্ভূত হয় এবং এটি মানব ইতিহাসের প্রাচীনতম সাহিত্যিক রচনাগুলির মধ্যে একটি। এর সূচনা পাঁচটি সুমেরীয় কবিতার মাধ্যমে যা গিলগামেশ সম্পর্কে, যিনি উরুকের রাজা ছিলেন, এবং প্রায় ২১০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে রচিত হয়েছিল। এই গল্পগুলি পরে একক মহাকাব্যে সংমিশ্রিত হয়েছিল। প্রাচীনতম বিদ্যমান সংস্করণটি “পুরাতন ব্যাবিলনীয়” সংস্করণ নামে পরিচিত এবং এর সময়কাল ১৮শ শতাব্দী খ্রিস্টপূর্বাব্দ। সবচেয়ে সম্পূর্ণ সংস্করণটি হল সিন-লেকি-উন্নিনি দ্বারা সংকলিত “স্ট্যান্ডার্ড ব্যাবিলনীয়” সংস্করণ যা ১৩শ থেকে ১০শ শতাব্দী খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যে কোথাও তৈরি হয়েছিল।

মহাকাব্যের সারাংশ

প্রথম অংশ: বন্ধুত্ব এবং অভিযাত্রা

মহাকাব্যের শুরুতে উরুকের রাজা গিলগামেশকে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়, যিনি তাঁর প্রজাদের ওপর অত্যাচার চালাচ্ছিলেন। তাকে থামানোর জন্য দেবতারা এনকিদু নামক এক বন্য মানুষ সৃষ্টি করেন। এনকিদু শামহাত নামে একটি মন্দিরের পতিতার সাথে সাক্ষাৎ করার পরে সভ্য হয় এবং উরুকে যাত্রা করে। সেখানে গিয়ে সে গিলগামেশকে চ্যালেঞ্জ করে এবং তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। একসঙ্গে তারা সিডার অরণ্যে যাত্রা করে এবং হুম্বাবা নামক রক্ষককে হত্যা করে। এই কার্যক্রম দেবতাদের ক্রোধিত করে এবং ইশতার গিলগামেশকে শাস্তি দেওয়ার জন্য স্বর্গীয় ষাঁড় পাঠায়। গিলগামেশ এবং এনকিদু ষাঁড়কে হত্যা করে এবং এনকিদু মারা যায়।

দ্বিতীয় অংশ: অমরত্বের অনুসন্ধান

এনকিদুর মৃত্যুর পরে গিলগামেশ অমরত্বের রহস্য খুঁজে বের করার জন্য একটি দীর্ঘ যাত্রা শুরু করে। তার যাত্রা তাকে উত্তাপশ্তিমের কাছে নিয়ে যায়, যিনি একটি মহাপ্লাবনের বেঁচে থাকা একমাত্র মানব এবং দেবতাদের দ্বারা অমরত্ব প্রাপ্ত। উত্তাপশ্তিম গিলগামেশকে বলে যে অমরত্ব কেবল দেবতাদের জন্য এবং মানুষদের জন্য নয়। গিলগামেশ শেষ পর্যন্ত বুঝতে পারে যে মানুষের জন্য অমরত্ব অসম্ভব।

ঐতিহাসিক আবিষ্কার

প্রাথমিক আবিষ্কার

১৯শ শতাব্দীতে গিলগামেশের গল্প পুনরাবিষ্কৃত হয়। ১৮৫০-এর দশকে অস্টেন হেনরি লেয়ার্ড, হরমুজদ রাসাম, এবং ডব্লিউ. কে. লফটাস অশুরবানিপালের গ্রন্থাগারে প্রায় ১৫,০০০ কিউনিফর্ম ট্যাবলেট আবিষ্কার করেন। জর্জ স্মিথ পরবর্তীতে এই ট্যাবলেটের অনুবাদ করেন এবং মহাকাব্যটি আধুনিক বিশ্বে পরিচিত হয়ে ওঠে।

পরবর্তী আবিষ্কার

২০শ শতাব্দীতে বিভিন্ন গবেষক, যেমন পল হাপ্ট এবং পিটার জেনসেন, মহাকাব্যের টেক্সট সংগ্রহ এবং অনুবাদে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৯৮ সালে থিওডোর কোয়াসম্যান একটি টুকরা আবিষ্কার করেন যা মহাকাব্যের প্রথম লাইনগুলি ধারণ করে। এনমেবারাগেসি অব কিশ-এর সাথে সম্পর্কিত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলির আবিষ্কার গিলগামেশের ঐতিহাসিক অস্তিত্বে বিশ্বাস যোগায়।

মহাকাব্যের বিভিন্ন সংস্করণ

পুরাতন ব্যাবিলনীয় সংস্করণ

এই সংস্করণটি খণ্ডিত হলেও মহাকাব্যের প্রাথমিক রূপ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করে।

স্ট্যান্ডার্ড ব্যাবিলনীয় সংস্করণ

সিন-লেকি-উন্নিনি দ্বারা সংকলিত এই সংস্করণটি বেশি সম্পূর্ণ এবং সংগঠিত, এবং এতে মৃত্যুহীনতার থিম গুরুত্ব পেয়েছে। এটি বারোটি ট্যাবলেট নিয়ে গঠিত এবং এই সংস্করণের শেষ ট্যাবলেটটি পরে সংযোজন করা হয়েছে।

সাংস্কৃতিক এবং সাহিত্যিক গুরুত্ব

পরবর্তী সাহিত্যিক প্রভাব

গিলগামেশের মহাকাব্য পরবর্তী সাহিত্যিক ঐতিহ্যে গভীর প্রভাব ফেলেছে, বিশেষ করে গ্রিক বীরত্বপূর্ণ মহাকাব্যগুলির উপর।

বাইবেলের সাদৃশ্য

গবেষকরা মহাকাব্যটির সাথে বাইবেলের বেশ কিছু কাহিনীর সাদৃশ্য লক্ষ্য করেছেন। গিলগামেশের মহাপ্লাবনের কাহিনী এবং বাইবেলের আদম এবং ইভের গল্পের মধ্যে সাদৃশ্য রয়েছে।

উপসংহার

গিলগামেশের মহাকাব্য কেবল প্রাচীন সাহিত্যিক রচনাই নয়, বরং এটি ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক অন্তর্দৃষ্টির একটি সমৃদ্ধ উৎস। বন্ধুত্ব, অমরত্বের অনুসন্ধান, এবং মানুষের সীমাবদ্ধতার গ্রহণযোগ্যতার থিমগুলি আধুনিক পাঠকদের সাথে এখনও প্রাসঙ্গিক। এটি প্রাচীন এবং আধুনিক বিশ্বের মধ্যে একটি সেতু হিসেবে রয়ে গেছে।

এসপের জীবন
সামাজিক মিডিয়া বিপণন: সেরা জড়িত থাকার কৌশল

Editors’ Choice

Reactions

0
0
0
0
0
0
ইতিমধ্যে এই পোস্টের জন্য প্রতিক্রিয়া করা হয়েছে।

Nobody liked ?

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

GIF