জারা ছিল একাদশ শ্রেণির এক মেয়ে, যার প্রকৃতিকে ভীষণ ভালোবাসা। তার গ্রাম সংলগ্ন জঙ্গলে সে প্রায়ই ঘুরতে যেত। বড় বড় গাছ, পাখিদের ডাক আর মৌমাছিদের গুঞ্জন তার মন ভরিয়ে দিত। কিন্তু একদিন সকালে জারা খেয়াল করল, জঙ্গলের একাংশ অদ্ভুত রকমের নীরব। পাখির ডাক নেই, আর ফুলগুলোও যেন মলিন হয়ে গেছে।
জারা অবাক হয়ে ভাবতে লাগল, এমনটা কেন হচ্ছে? সে সিদ্ধান্ত নিল বিষয়টা খতিয়ে দেখার। সে তার নোটবুক, একখানা ম্যাগনিফাইং গ্লাস, আর তার সেরা বন্ধু আমিরকে নিয়ে জঙ্গলের গভীরে প্রবেশ করল।
ঝর্নায় প্রথম সংকেত
তারা প্রথমে খেয়াল করল, জঙ্গলের ঝর্নার পানি ঘোলা হয়ে গেছে। আগের মতো মাছও নেই।
“পানিটা এত নোংরা কেন?” আমির জিজ্ঞেস করল।
জারা দেখাল ঝর্নার ধারে কিছু আবর্জনা—প্লাস্টিকের বোতল আর প্যাকেট।
“এটা দূষণ,” জারা বলল। “মানুষ যখন জঙ্গলে ময়লা ফেলে, তখন সেটা পানিকে নষ্ট করে। ফলে ঝর্নায় থাকা প্রাণীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।”
আমির প্রশ্ন করল, “কিন্তু এর সাথে বাকি জঙ্গলের কী সম্পর্ক?”
জারা তার নোটবুক খুলে বলল, “সবকিছু একে অপরের সাথে জড়িত। ঝর্নার মাছ আর ব্যাঙ পাখিদের খাবার। আর পরিষ্কার পানি না থাকলে গাছপালাও বাড়তে পারে না। ঝর্না দূষিত হলে পুরো পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।”
মৌমাছিদের গায়েব হওয়া
তারা আরও কিছুদূর এগিয়ে খেয়াল করল, ফুলের আশেপাশে মৌমাছি নেই।
“মৌমাছি না থাকলে ফুল কীভাবে বড় হবে?” আমির জিজ্ঞেস করল।
জারা বলল, “মৌমাছি ফুল থেকে ফুলে পরাগায়ন করে। এর মাধ্যমে গাছ বীজ তৈরি করে। যদি মৌমাছি না থাকে, তবে গাছপালা কমে যাবে। তখন গাছ খেয়ে বেঁচে থাকা প্রাণীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে, এমনকি আমরাও।”
“কিন্তু মৌমাছি কেন কমে যাচ্ছে?” আমির জানতে চাইল।
“সম্ভবত কীটনাশকের কারণে,” জারা বলল। “চাষিরা মাঝে মাঝে পোকামাকড় মারার জন্য রাসায়নিক ব্যবহার করেন, যা মৌমাছিদেরও মেরে ফেলে।”
জঙ্গল বাঁচানোর পরিকল্পনা
জারা আর আমির বুঝতে পারল যে, তাদের কিছু করতে হবে। তারা গ্রামে ফিরে তাদের শিক্ষক লীলা ম্যাডামের সাথে আলোচনা করল। লীলা ম্যাডাম পরিবেশ সম্পর্কে খুবই সচেতন ছিলেন।
তিনি তাদের সাহায্য করলেন একটি “জঙ্গলের বন্ধু” দল গঠন করতে। সবাই মিলে তারা ঝর্নার ধারের আবর্জনা পরিষ্কার করল, মৌমাছিদের জন্য বুনো ফুল লাগাল, আর গ্রামে পোস্টার লাগিয়ে পরিবেশ রক্ষার উপায় জানাল।
তারা স্থানীয় কৃষকদের সাথে আলোচনা করল কীটনাশকের পরিবর্তে প্রাকৃতিক পদ্ধতি ব্যবহারের জন্য। ধীরে ধীরে জঙ্গলটি আবার প্রাণবন্ত হয়ে উঠল। ঝর্নার পানি স্বচ্ছ হলো, মৌমাছি ফিরে এলো, আর পাখিরা গাছে বসে আনন্দের সুর তুলল।
গল্পের শিক্ষা
জারা আর আমির একটি বড় শিক্ষা পেল—আমাদের ছোট ছোট কাজও বিশাল প্রভাব ফেলতে পারে। তারা বুঝল, সমস্যা সমাধানের জন্য শিক্ষা আর দলগত কাজের প্রয়োজন।
জঙ্গল আবার একটি সুস্থ পরিবেশে পরিণত হলো, আর জারা জানত যে সে এবং তার বন্ধুরা চিরকাল এর রক্ষক থাকবে।
গল্পের নীতি:
প্রকৃতির সবকিছু একে অপরের সাথে সম্পর্কিত। আমাদের দায়িত্বশীল আচরণের মাধ্যমে পরিবেশকে রক্ষা করা সম্ভব। সবাই একসাথে কাজ করলে আগামী প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর পৃথিবী রেখে যাওয়া যাবে।