জীবনী

নচিকেতা ঘোষ

0

নচিকেতা ঘোষ (২৮ জানুয়ারি ১৯২৫ – ১২ অক্টোবর ১৯৭৬) ছিলেন একজন প্রখ্যাত বাঙালি সঙ্গীত পরিচালক ও সুরকার, যিনি প্রধানত বাংলা, হিন্দি এবং ওড়িয়া চলচ্চিত্রের জন্য সঙ্গীত রচনা করেছেন। তাঁর সৃষ্ট সুর ও সংগীতের ধারায় বাংলা সিনেমার সোনালী যুগে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়।

প্রাথমিক জীবন

নচিকেতা ঘোষ ২৮ জানুয়ারি ১৯২৫ সালে কলকাতা, বঙ্গ প্রদেশ (ব্রিটিশ ভারতের অধীনে) জন্মগ্রহণ করেন। সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ এক পরিবেশে বেড়ে ওঠার ফলে, ছোটবেলা থেকেই তিনি সঙ্গীতের গভীর প্রভাব ও স্বাদ অর্জন করেন। তাঁর পরিবারের পেছনে শিক্ষাগত ও পেশাগত মূল্যবোধ থাকলেও, সঙ্গীতের প্রতি তাঁর আকর্ষণ ছিল অসাধারণ। কলকাতার বিভিন্ন সাংস্কৃতিক আয়োজন, ঘরে ঘরে অনুষ্ঠিত সঙ্গীত সমাবেশ ও প্রচলিত লোকসঙ্গীত তাঁকে প্রভাবিত করেছিল।

কর্মজীবন

১৯৫০-এর দশকের গোড়া সময়ে নচিকেতা ঘোষ পেশাগত সঙ্গীত পরিচালনায় প্রবেশ করেন। তাঁর প্রথম চলচ্চিত্র ছিল বৌদির বোন (১৯৫৩), যা তাঁর সঙ্গীত পরিচালকের জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচনা ছিল। ১৯৫৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত জয়দেব চলচ্চিত্রে তাঁর সঙ্গীত রচনার মাধ্যমে তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেন। তাঁর সঙ্গীতে প্রথাগত ভারতীয় সুরের সঙ্গে আধুনিক বিন্যাসের সমন্বয় দেখা যায়, যা বাংলা চলচ্চিত্রের সুরের ধারাকে এক নতুন মোড়ে নিয়ে যায়। তিনি প্রথমবার মোহাম্মদ রফির কণ্ঠ ব্যবহার করে বাংলা চলচ্চিত্রে হিন্দি গানের আধুনিক রূপের সূচনা করেন এবং অর্ধাঙ্গিনী-তে লতা মঙ্গেশকরকে বাংলা সিনেমায় পরিচিত করে দেন।

নচিকেতা ঘোষের সঙ্গীত জীবনকাল ব্যাপক ও বহুমুখী ছিল। ১৯৫০, ১৯৬০ এবং ১৯৭০-এর দশকে তিনি অসংখ্য চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালনা করে দর্শকদের হৃদয়ে অমর সুর রচনা করেন। মাঝে মাঝে তিনি মুম্বাইয়ে হিন্দি চলচ্চিত্রের জন্যও কাজ করেন, তবে কলকাতার প্রতি তাঁর ভালোবাসা তাঁকে আবার বাংলা চলচ্চিত্রের মাঝে ফিরিয়ে আনে।

চলচ্চিত্রগীতি

নিচে তাঁর সঙ্গীত পরিচালনার কিছু উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রের তালিকা প্রদান করা হলো:

  • ১৯৫৩বৌদির বোন
  • ১৯৫৪জয়দেব
  • ১৯৫৫অর্ধাঙ্গিনী, ভালবাসা, নিষিদ্ধ ফল, পথের শেষে, ঝরের পরে
  • ১৯৫৬অসামাপ্ত, ত্রিজমা, নবজন্ম
  • ১৯৫৭তাপসি, প্রিথিবী আমারে চায়, নতুন প্রভাত, রাস্তার ছেলে, হরিশচন্দ্র
  • ১৯৫৮ইন্দ্রাণী, ভানু পেলো লটারি, বন্ধু, চাওয়া পাওয়া, রাজধানী থেকে
  • ১৯৫৯কিছুক্ষন, নির্ধারিত শিল্পীর অনুপস্থিতিতে, স্বপ্নপুরী
  • ১৯৬০ক্ষুধা, আকাশ-পাতা, বিয়ের খাতা, হাত বারালে বন্ধু, চুপ চুপই আসে
  • ১৯৬১কানামাছি
  • ১৯৬৪কান্ততার
  • ১৯৬৮ছোট্ট জিজ্ঞাসা, রক্তরেখা
  • ১৯৬৯চিরদিনের
  • ১৯৭০নিশি পদ্মা, বিলম্বিত লয়
  • ১৯৭১ফরিয়াদ, ছিন্নপত্র, ধন্য মেয়ে
  • ১৯৭২নতুন দিনের আলো, স্ত্রী
  • ১৯৭৩অগ্নিভ্রমর, শাবরী, বনপলাশীর পদাবলী, নানীগোপালের বিয়ে, নকোল সোনা, শ্রাবণ সন্ধ্যা
  • ১৯৭৪মৌচাক, অসতি, সুজাতা, আলোর ঠিকানা, ছুটির ফাঁদে
  • ১৯৭৫প্রিয় বন্ধাবি, কাজললতা, স্বয়ংসিদ্ধ, নগর দার্পণে, সন্যাসী রাজা
  • ১৯৭৬হোটেল স্নো ফক্স, অসাধারণ, মোম্বাতি, আনন্দ মেলা, সেই চোখ
  • পরবর্তীতে মুক্তিপ্রাপ্তব্রজবুলি (১৯৭৯), অভিষেক (১৯৮৪)

ব্যক্তিগত জীবন

নচিকেতা ঘোষের পিতামহ ছিলেন ডঃ সনাত কুমার ঘোষ, যিনি কলকাতার একজন সুপ্রসিদ্ধ চিকিৎসক ছিলেন। পরিবারের উচ্চশিক্ষা ও সংস্কৃতির প্রভাব সত্ত্বেও, নচিকেত ছোটবেলা থেকেই সঙ্গীতে আগ্রহী ছিলেন। তিনি স্বীবাসী দত্তের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন এবং তাঁদের দুই কন্যা ও এক পুত্র ছিলেন। তাঁর পুত্র, সুপারনা কান্ত ঘোষ, পরবর্তীতে সঙ্গীতের ক্ষেত্রে নিজের ছাপ রেখে বাঙালি চলচ্চিত্রে একজন সুপরিচিত সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন।

উত্তরাধিকার

নচিকেতা ঘোষ বাংলা চলচ্চিত্র ও আধুনিক বাংলা গানের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন এনে গেছেন। তাঁর সৃষ্ট সুরগুলো এখনও সমালোচকদের ও শ্রোতাদের হৃদয়ে অমর হয়ে আছে এবং তাঁর সঙ্গীতশৈলী নতুন প্রজন্মের সঙ্গীতশিল্পীদের উপর ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছে।

ভালো ঘুমের জন্য কার্যকরী টিপস
হৃদরোগ থেকে বাঁচতে করণীয়

Reactions

0
0
0
0
0
0
ইতিমধ্যে এই পোস্টের জন্য প্রতিক্রিয়া করা হয়েছে।

Nobody liked ?