একটি সমস্যার গ্রাম
সবুজ পাহাড়ে ঘেরা একটি ছোট্ট গ্রামে মানুষজন সাধারণ এবং আনন্দময় জীবনযাপন করত। কিন্তু এক গ্রীষ্মে একটি অদ্ভুত সমস্যা দেখা দিল: তাদের মজুত রাখা শস্য প্রতিদিন অদৃশ্য হয়ে যেতে লাগল। ধানের বস্তা ক্রমশ হালকা হয়ে যাচ্ছিল, আর গ্রামবাসীরা চিন্তিত হয়ে পড়ল যে শীতকালে খাবার ফুরিয়ে যাবে।
এই রহস্য সমাধানের জন্য গ্রামের বয়োজ্যেষ্ঠরা সবার সঙ্গে সভা করল। একজন প্রবীণ বললেন, “আমাদের শস্য রক্ষা করতে হবে। কিন্তু আগে জানতে হবে, শস্য কে বা কী চুরি করছে।”
চড়ুইয়ের পর্যবেক্ষণ
একটি গাছে বসে ছিল ছোট্ট একটি চড়ুই পাখি, যার নাম ছিল চিড়পি। চিড়পি তার তীক্ষ্ণ চোখ আর বুদ্ধিমত্তার জন্য গ্রামে বিখ্যাত ছিল। সভার কথা শুনে চিড়পি সিদ্ধান্ত নিল, গ্রামবাসীদের সাহায্য করবে।
সূর্যাস্তের পর চিড়পি তার গাছের ডাল থেকে মজুতঘর (গুদামঘর) লক্ষ্য করতে শুরু করল। সে লক্ষ্য করল, একটি ছোট্ট ছিদ্র দিয়ে ইঁদুরের একটি দল মজুতঘরের ভেতরে ঢুকছে। তারা শস্য কেটে কেটে তাদের গর্তে নিয়ে যাচ্ছে।
“এটা আমাকে গ্রামবাসীদের জানাতে হবে,” ভাবল চিড়পি, দৃঢ় সংকল্পে ডানা ঝাপটিয়ে।
গ্রামবাসীদের প্রতিক্রিয়া
পরের দিন সকালে, চিড়পি জোরে চিঁ চিঁ করতে করতে গ্রামের চত্বরে এসে বসে পড়ল, যতক্ষণ না গ্রামবাসীরা তার দিকে মনোযোগ দিল। “আমার পিছু পিছু আসো,” যেন বলতে চাইছিল সে।
চিড়পি মজুতঘরের দিকে উড়ে গেল, আর গ্রামবাসীরাও তার পেছন পেছন চলল। যখন চিড়পি মজুতঘরের ছিদ্রের কাছে গিয়ে বসে, গ্রামবাসীরা নীচু হয়ে ছিদ্রটি পরীক্ষা করল। “ইঁদুর!” তারা চিৎকার করে উঠল। “এই ছিদ্র দিয়েই আমাদের শস্য চুরি হচ্ছে!”
কিন্তু বৃদ্ধ হরন মিয়া মাথা নেড়ে বললেন, “সমস্যাটা বুঝতেই তো হলো, কিন্তু একে সমাধান করতে হবে।”
চিড়পির বুদ্ধিমত্তা
চিড়পি আবার চিঁ চিঁ করে ডাকল, যেন বলছে, “আমার একটা পরিকল্পনা আছে।” সে গ্রামের চারপাশে উড়ে কাঁটাঝোপের কাছে গিয়ে বসল। তারপর নদীর পাড়ে পড়ে থাকা শুকনো মাটি ঠোঁট দিয়ে ঠোকরাতে লাগল।
গ্রামবাসীরা তার কাজ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করল। ছোট্ট এক ছেলেকে, রবি, হঠাৎ বলে উঠল, “সে আমাদের দেখাচ্ছে, কিভাবে ছিদ্রটা বন্ধ করতে হবে!”
সবাই মিলে কাঁটার ডালপালা সংগ্রহ করল এবং নদীর কাদা পানিতে মিশিয়ে পেস্ট বানালো। তারা সেই কাদা দিয়ে মজুতঘরের ছিদ্রটি বন্ধ করে দিল এবং তার ওপর কাঁটার শাখা বসিয়ে দিল, যাতে ইঁদুররা ছিদ্র চিবিয়ে ভেতরে ঢুকতে না পারে।
একটি শিক্ষা
সেই রাতে চিড়পি আবার মজুতঘর দেখতে গেল। ইঁদুরেরা ছিদ্রের কাছে এল, কিন্তু কাঁটার বাঁধা দেখে এবং তীক্ষ্ণ কাঁটার খোঁচা অনুভব করে তারা দৌড়ে পালিয়ে গেল।
পরের দিন সকালে গ্রামবাসীরা আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে উঠল। “আমাদের শস্য এখন নিরাপদ, চিড়পির জন্য!” তারা বলল। সেই ছোট্ট চড়ুই গ্রামে নায়ক হয়ে উঠল।
গ্রামবাসীরা আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শিখল: সমস্যাটি বোঝা হলো প্রথম ধাপ, কিন্তু সেটি সমাধান করার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
চড়ুইয়ের উত্তরাধিকার
সেই দিন থেকে, যখনই কোনো সমস্যা দেখা দিত, গ্রামবাসীরা বলত, “চিড়পির মতো ভাবো। গভীরভাবে দেখো, বুঝো এবং বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে কাজ করো।”
এভাবেই গ্রামটি সমৃদ্ধি লাভ করল। মানুষজন একসঙ্গে কাজ করল এবং বুদ্ধিমান চড়ুই থেকে শেখা জ্ঞান ও ঐক্যের মাধ্যমে তাদের জীবন আরো সহজ করে তুলল।